শেয়ারবাজারের স্বার্থে সুদ হার কমানোর দাবি ডিসিসিআই’র

শেয়ারবাজারের উন্নয়নে আমানতের সুদ হার ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির মুনাফার ওপর আরোপিত কর কমাতে হবে। পাশাপাশি তালিকাবর্হিভূত কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে হবে।

শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র (ডিসিসিআই) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘মিট দি প্রেস’ সভায় লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন সংগঠনটির নব নির্বাচিত সভাপতি মো. সবুর খান।

সবুর খান বলেন, আমানতের সুদের হার কমানোর মাধ্যমে সাধারণ জনগনকে শেয়ারবাজারের প্রতি আকৃষ্ট করা যাবে। এছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানির মুনাফার ওপর আরোপিত কর কমানোর মাধ্যমে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন সম্ভব।

মো. সবুর খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ডিসিসিআই মনে করে দেশে সার্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও গতিশীল ব্যবসা বজায় রাখা খুবই জরুরি। চলতি অর্থবছর জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চহিদা কম থাকায় শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

একই সঙ্গে বিভিন্ন ইউটিলিটির অভাবে শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধিও হ্রাস পেতে পারে। তাছাড়া দেশে বিনিয়োগের পরিস্থিতি সন্তোষজনক না হওয়ায় এ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষমাত্রা অর্জন করা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে।

তিনি আরও বলেন, সার্বিকভাবে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সহায়ক নয়। বেসরকারি খাত মনে করে দেশের বৃহৎ স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দল সহনশীল মনোভাবের পরিচয় দিবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ দেশের জন্য ভালো নির্দেশিকা হিসেবে ভূমিকা পালন করে। তাই সহনশীলভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে তাদের প্রতি জনগনের শ্রদ্ধা ও আস্থা বাড়বে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার সবচেয়ে সহজ পদক্ষেপ হলো দেশের সকল নাগরিককে সেন্ট্রাল ডাটাবেজের আওতায় আনা। এতে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম সহজ হবে বলে মিট দি প্রেসে মন্তব্য করেন মো. সবুর খান।

মূদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি পরস্পরবিরোধী উল্লেখ করে সবুর খান বলেন, একদিকে সরকারের রাজস্ব আদায় ব্যাপক বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রসারিত রাজস্বনীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে সংকুচিত মূদ্রানীতি গ্রহণের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে অর্থায়ন বাধাগ্রস্ত করছে।

বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যে যেখানে কোনোভাবেই ২০ শতাংশ মুনাফা করা সম্ভব হয় না সেখানে ১৮- ২০ শতাংশ হারে ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা খুবই দূরহ ব্যাপার। এছাড়া, স্থানীয় ঋণপত্র’র উপর পণ্য সরবরাহ বা চুক্তি সম্পাদনের জন্য ঠিকাদার ও সরবরাহকারীর ন্যায় করারোপ করা হচ্ছে। স্থানীয় ঋণপত্র খোলার উপর এ ধরনের করারোপ করার ফলে ব্যবসায়িক ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত পণ্যের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানিকৃত পণ্যের সঙ্গে অসমপ্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাছাড়া স্থানীয় ঋণপত্রের উপর করারোপের মাধ্যমে ব্যাংকিং চ্যানেলের লেনদেনকেও নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তাই সরকারকে বেসরকারী খাতের পক্ষ থেকে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এ ধরনের অযৌক্তিক করারোপ না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখন পর্যন্ত নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। তার উপর জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত ছয়টি ধাপে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। ফলে যানবাহনের ভাড়াও বেড়েছে, এর সঙ্গে বেড়েছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি।

এছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে অনেক মিল কারখানার উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে এবং নতুন কোনো কারখানা স্থাপিত হচ্ছে না। ফলে বিনিয়োগ কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করে ডিসিসিআই।

তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার বিজার্ভ রেকর্ড পরিমান বৃদ্ধির সূচক শক্তিশালী অর্থনীতির পরিচায়ক। অন্যদিকে তা মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি এবং নতুন কারখানা স্থাপনের শ্লথতারও নির্দেশন।



পরিসংখ্যাণে দেখে যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে রেসরকারি খাতে বিনিয়োগের পরিমান ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ১৯ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে এবং সরকারি খাতে বিনিয়োগ একই সময়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের হার কমে যাচ্ছে। যা দেশের ভৌত অবকাঠামোর জন্য সুসংবাদ নয়।

তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাককেনসি ইতিমধ্যে বলেছে, ২০২০ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তে পারে। এজন্য প্রয়োজন দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের নিশ্চয়তা।

প্রতিশ্রুতি: আগামী এক বছরে ডিসিসিআই’র নতুন পরিচালনা পর্ষদ যে সমস্ত কার্যক্রম সম্পাদন করতে ইচ্ছা পোষণ করেছে তার মধ্যে- ডিসিসিআই’র সকল সদস্যের ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য অটোমেশন, অপ্রচলিত পণ্যের বাজারজাতকরণের উদ্যোগ, চেম্বারের সমঝোতা স্বারকের (এমওইউ) পার্টনারদের সঙ্গে সম্পর্ক পুণঃস্থাপন, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোর কার্যক্রম আরও স্থিতিশীলকরণ, প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনিয়োগে আকৃষ্টকরণ, ঢাকা চেম্বারের বিবিএ কলেজকে বিবিএ ফর এন্টারপ্রিনিয়ারশিপ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, প্রকাশনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবসায়ীক তথ্য অনলাইনে প্রতিস্থাপন করা, পলিসি এডভোকেসি করা, বিদেশে কর্মজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

এছাড়া, চলমান প্রকল্প বাস্তবায়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন, ব্যবসায়ীক ব্যয় হ্রাসকরণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যার সমাধান, ন্যাশনাল আইডি কার্ড, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নীতিমালা প্রণয়ন, শেয়ারবাজারের উন্নয়ন এবং আমেরিকার বাজারে জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখা।

ডিসিসিআই’র নতুন পর্ষদ: প্রেসিডেন্ট মো. সবুর, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নেসার মাকসুদ খান, ভাইস প্রেসিডেন্ট আবসার করিম চৌধুরী। এছাড়া পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন- এএসএম মহিউদ্দিন মোমেন, ওসমান গণি, খায়রুল মজিদ মাহমুদ, কে এম এস মনজুরুল হক, হায়দার আহমেদ খান, আবুল হোসেন, ওসামা তাসের, মোহাম্মদ ইফতেখারুদ্দিন নওশাদ, রিজওয়ান-উর-রহমান, হুমায়ুন রশিদ, আবু হুরায়রা, শহিদুল ইসলাম, হুসাইন এ শিকদার, আলহাজ আব্দুল সালাম এবং মো. সোয়েব চৌধুরী।

-শেয়ারনিউজ২৪

No comments:

Post a Comment

!!! Thank You !!!