প্রাইমারী মার্কেটেই বিনিয়োগকারীদের ভিড়

নিশ্চিত লাভের আশায় আইপিও বাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। এজন্য তারা শেয়ারপ্রতি অতিরিক্ত প্রিমিয়াম দিতেও কার্পণ্য করছেন না। অপরদিকে, লোকসানের ভয়ে তালিকাভুক্ত ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার দর হাতের নাগালে থাকলেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম।

বিনিয়োগকারীদের যুক্তি, যেহেতু আইপিওর শেয়ারে বাজারের সব স্তরের বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ থাকে তাই এখানে লোকসান হবার সম্ভাবনা কম। হয়তো সময় লাগতে পারে, তবে মুনাফা হবেই। তাই আইপিওতে আবেদনের ক্ষেত্রে কোম্পানির মৌলভিত্তির বিষয়টি বিনিয়োগকারীরা চিন্তাই করেন না। বিনিয়োগকারীদের এ মনোভাব শেয়ারবাজারে যে কোনো ধরনের কোম্পানির তালিকাভুক্তির সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা করছেন। এ সুযোগে ভুয়া আর্থিক প্রতিবেদন দিয়েও তালিকাভুক্তির আগ্রহ প্রকাশ করে অনেক কোম্পানি।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন অনেক শেয়ার রয়েছে যেগুলোর দর ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। এছাড়া অনেক কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ২০ টাকার নিচে। এসব কোম্পানির শেয়ারের চেয়ে নতুন কোম্পানির আইপিওর দিকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি। অথচ নতুন কোম্পানির শেয়ার প্রিমিয়ামসহ ৪০ টাকা দরে কিনতেও আপত্তি নেই তাদের। নিশ্চিত মুনাফা করতেই বিনিয়োগকারীদের কাছে আইপিও’র শেয়ার বর্তমানে অগ্রগণ্য বলে জানান অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতে, মুলত: আইপিওর শেয়ারে লোকসানের সম্ভাবনা কম। এ কারণে প্রাইমারি বাজারে বিনিয়োগকারীদের চাহিদা সব সময় বেশি। ধসের আগেও আইপিও বাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল অন্যরকম। তবে তখন আইপিও বাজারের পাশাপাশি সেকেন্ডারী বাজারেও শেয়ারের চাহিদা ছিল। কারণ তখন সেকেন্ডারী মার্কেটেও বিনিয়োগকারীরা ভালো মুনাফা করতে পেরেছেন।

তবে ২০১০ সালের পর বাজার পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে। ২০১০ সালের আগে বিনিয়োগকারীরা যে কোম্পানির শেয়ার ৪০০ টাকায় কিনতেন সেসব শেয়ার এখন ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর্থিক খাতের একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ধসের আগে বিনিয়োগকারীরা ৪৯০ টাকায় লেনদেন করেছেন। অথচ বর্তমানে এ শেয়ারটি ৩০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।



অপরদিকে, অভিন্ন ফেস ভ্যালুর পর শেয়ার দরও নেমেছে অনেক নিচে। বাজারে যে হারে সূচক কমেছে তার তুলনায় অনেক বেশি হারে কমেছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দর। তারপরও বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগের আগ্রহ আগের মতো পান না। বরং এর চেয়ে বেশি প্রিমিায়াম দিয়ে অপেক্ষপকৃত দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারে আবেদন করছেন বিনিয়োগকারীরা। ১০ টাকার শেয়ারে ৫০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়েও আইপিও আবেদন করতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। অথচ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাংকিং খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর এখন অনেক নিচে থাকলেও সেদিকে আগ্রহ কম। এ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৭টির শেয়ার দর ৪০ টাকার নিচে রয়েছে। পাশাপাশি মৌলভিত্তি এবং শেয়ারের দিক দিয়ে অন্য যে কোনো খাতের তুলনায় এগিয়ে ব্যাংকিং খাত।

গত দু'মাসে বাজারে বেশকিছু নতুন আইপিও এসেছে, আরো অনেকগুলো আইপিও প্রস্তাব পাইপলাইনে আছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বেশ কয়েকটি। সেকেন্ডারি মার্কেটে সর্বস্ব হারানো বিনিয়োগকারীরা তাই নতুন করে প্রাইমারি মার্কেট বা আইপিও নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস লিমিটেড, অক্টোবরের মাঝামাঝিতে এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেড, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, একই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার লিমিটেড, শেষ সপ্তাহে আর্গন ডেনিমস লিমিটেড, ডিসেম্বরের প্রথম দিকে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেড, মাঝামাঝিতে প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেড, শেষ দিকে গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেডসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির আইপিও আবেদনের সুযোগ আসে। আর শুধুমাত্র সানলাইফ ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীরা প্রিমিয়াম দিয়ে আবেদন করেছেন। আর এসব কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের সাড়াও ছিল ব্যাপক।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের শেষ দিকে এবং চলতি বছরের শুরু থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিক নতুন আইপিও অনুমোদন দেয়ায় বিনিয়োগকারীরা পুঞ্জীভূত লোকসান কাটাতে প্রাইমারি মার্কেটের দিকে বেশি আগ্রহ প্রকাশ  করছেন। 


-শেয়ারনিউজ২৪

No comments:

Post a Comment

!!! Thank You !!!