আবারও গভীর অন্ধকারের দিকে শেয়ারবাজার

অব্যাহত দরপতনের কারণে আবারও গভীর অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও ভয়ে তাদের বিনিয়োগ গুটিয়ে বসে রয়েছে। এতে ফায়দা তুলে নিচ্ছে এক শ্রেনীর কারসাজি চক্র। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে সরকার সরাসরি পদক্ষেপ না নিলে এ বাজারের অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ  করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারে যখন ব্যাপক দরপতন হয়েছিল তখন ক্ষমতায় ছিল বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। তখন কারসাজির মাত্রা  এতোটাই প্রকট আকার ধারন করেছিল যারা ওই সময় বাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন তাদের টাকা নিমেষেই কাগজে পরিণত হয়েছিল। যদিও বাজারের পরিধি ওই সময় বর্তমান বাজারের চেয়ে ছোট ছিল। তবে ওই সময় বাজার ধসের পিছনে যারা দায়ী ছিল তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারকে চরম মূল্য দেয়ার পিছনে শেয়ারবাজার একটি কারণ ছিল বলে রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করেছেন। এরপর ২০০৮ সালে আবার আওয়ামী লীগ সরকার দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের কোনো কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি রোড শো’র মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এতে অন্যান্য পেশার লোকজনসহ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বেকার ছাত্র শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে একটু সাবলম্বী হওয়ার আশায়। এরপর ২০১০ সালের নভেম্বরে শেয়ারবাজার অতি উচ্চতায় উঠে যায়। বাজার নিয়ে শুরু হয় বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা সমালোচনা। বিষয়টি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বুঝে উঠতে না পারলেও কারসাজি করে যারা বাজারকে ওই অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিল তারা ঠিকই ফায়দা লুটে বেরিয়ে গিয়েছিল। এরপর পতনের ধারা শুরু হয় ডিসেম্বর থেকে। ধীরে ধীরে বাজারে মহাধস নেমে আসে। যা ২ বছর ধরে বিরাজমান। এ সময়ের মধ্যে সরকার বাজারের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে যতটুকু আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে তার চেয়ে সরকারের দায়িত্বশীল কয়েকজন মন্ত্রীর বাজার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অযাচিত নেতিবাচক কথাবার্তায় বাজারে পতনের মড়ক লাগে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সরকারের কাছে বাজারের স্বাভাবিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে রাস্তায় নেমে অনেক কান্না কাটি করলেও শেষ রক্ষা হয়নি।

এদিকে চলতি বছর ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক ৩৬০০ পয়েন্টে নেমে যায়। ওই দিন সংসদে বিনিয়োগকারী ও বাজারকে রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সংসদকে প্রাণবন্ত করে তোলে। এরপরে  বাজার একটু একটু করে ভালো অবস্থার দিকে যায়। বিনিয়োগকারীরা আবারও বিনিয়োগে ফিরে আসে। ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাজার ভালো ছিল। এরপর বাজারে আবার অব্যাহত দরপতন নেমে আসে। বর্তমানে ডিএসই’র সাধারণ মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৪০২৪ পয়েন্টে। লেনদেন গড়ে ২০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ২০১০ সালে ৫ ডিসেম্বর ডিএসই’র সাধারণ সূচক ছিল ৮৯১৮ পয়েন্ট। লেনদেন গড়ে দুই হাজার কোটি টাকার উপরে ছিল। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে সংশ্লিষ্ট রেগুলেটর প্রতিষ্ঠান কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। তবে বাজারের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ তারা নিয়েছে। কিন্তু বাজারে কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকারের শেয়ারবাজারে সরাসরি ইতিবাচক ভূমিকা রাখার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।  


এ বিষয়ে একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংকের ঊর্ধŸতন কর্মকর্তারা জানান, বাজার যেভাবে নিম্মমুখী হচ্ছে তাতে মনে হয় সংশ্লিষ্ট রেগুলেটের প্রতিষ্ঠানের মাথা ব্যথা নেই। তবে বিনিয়োগকারী ও অর্থের যোগান বাড়ানোর ক্ষেত্র হিসেবে শেয়ারবাজারকে এ মুহুর্তে সরকারের বিশেষ বিবেচনায় নেয়া উচিত। পাশাপাশি বাজার নিয়ে কারা কারসাজি করছে কিংবা অব্যাহত পতন কেন হচ্ছে তা দ্রুত খতিয়ে দেখাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।

এ বিষয়ে কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জানান, বর্তমান বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আইসিবি, মার্চেন্ট ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো সক্রিয় না। এদের মধ্যে কেউ কেউ ডে ট্রেডারের মতো আচরণ করছে। আবার কেউ কেউ সাইড লাইনে বসে কম দরে শেয়ার কেনার জন্য বিনিয়োগ থেকে দুরে রয়েছে। একইসঙ্গে বাজারকে যারা কারসাজির আশ্রয় নিয়ে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের ব্যাপারে খতিয়ে দেখে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

বিনিয়োগকারী আসাদুল, সাব্বির, রনি বলেন, এ বাজারের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি), ডিএসই নানা ধরনের আশার বানী শুনিয়ে ২ বছর সময় পার করেছে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পতনের বৃত্তে বাজার ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু বাজারের স্বাভাবিক অবস্থা টিকিয়ে রাখতে তাদের মধ্যে উদাসীনতা কাজ করছে। তাই একমাত্র সরকার এ বাজারের অস্থিত্ব রক্ষা করতে পারবে বলে তাদের মতো অন্য বিনিয়োগকারীরাও বিশ্বাস করেন বলে তারা জানান।       

No comments:

Post a Comment

!!! Thank You !!!